[email protected] শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পের নির্দেশে বন্ধ শিক্ষার্থীদের মার্কিন ভিসা সাক্ষাৎকার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৫ ১৫:০৫ পিএম

ফাইল ছবি

বিশ্বের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা খাত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসনের সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় সেই স্বপ্নে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষা খাতে একের পর এক কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিচ্ছে ট্রাম্প সরকার।

এবার তারা এমন এক নির্দেশনা জারি করেছে, যা বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মনে শঙ্কার ছায়া ফেলেছে।

 

মঙ্গলবার (২৭ মে) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে বিশ্বের সব মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটে একটি ক্যাবল বার্তা পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত’ কোনও শিক্ষার্থী (এফ), পেশাগত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী (এম), অথবা বিনিময় কর্মসূচির (জে) ভিসার নতুন সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা যাবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, শিগগিরই একটি কঠোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই প্রক্রিয়া চালু হতে যাচ্ছে, যার প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

 

এই নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভিসা প্রার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত এক দশকে করা সব পোস্ট পর্যালোচনা করা হবে। এমনকি যদি কোনো বিতর্কিত পোস্ট মুছে ফেলা হয়, তাহলেও কনস্যুলার অফিসারদের সেই পোস্টের স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। বিশেষভাবে নজরে রাখা হচ্ছে যেসব প্রার্থী ‘সন্ত্রাসবাদে জড়িত বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন’ জানিয়ে পোস্ট করেছে কিংবা ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের সাথে যুক্ত বলে সন্দেহ রয়েছে। মার্চ মাস থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে এ ধরনের নজরদারি চালানো হচ্ছে, যা এখন পূর্ণাঙ্গ নীতিতে রূপ নিতে চলেছে।

এই ঘটনায় শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপরেও পড়তে পারে ভয়াবহ প্রভাব। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেন এবং তারা দেশটির অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখেন। এখন সাক্ষাৎকার বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে, শিক্ষার্থীরা নতুন গন্তব্য খুঁজে নিতে বাধ্য হবেন।

এই একই দিনে ট্রাম্প প্রশাসন আরেকটি বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত নেয়—বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে থাকা সব সরকারি অর্থায়নের চুক্তি বাতিল করে দেয়। এ চুক্তির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান পেয়ে আসছিল গবেষণা, শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক বিনিময় কর্মসূচির জন্য। এই পদক্ষেপেরও যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নীতিগত স্বচ্ছতা’।

পররাষ্ট্র দফতরের পাঠানো ক্যাবল বার্তায় আরও জানানো হয়, ভিসা যাচাই ও গ্রাহক যাচাই প্রক্রিয়ায় (ভেটিং) বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যার অংশ হিসেবে এই সাময়িক স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব আবেদনকারী আগে থেকে সাক্ষাৎকারের সময় পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হবে না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোনো ধরনের সন্দেহ থাকলেই শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করা হবে বা দেওয়া হবে না।” ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা ও আকর্ষণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের উপর নজরদারির এই প্রবণতা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারেরও লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোর্স: ইনকিলাব

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর