কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেফতার হওয়ার পর একে একে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে তার নানা অপকর্মের কথা। প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল এবং নারী নির্যাতনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার তথ্য প্রকাশ করেছে অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ক্রাইম এডিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই ছাত্র-আন্দোলনের ওপর চালানো হয় নির্মম দমনপীড়ন, যা রূপ নেয় রক্তাক্ত গণহত্যায়। তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ইউটিউব চ্যানেলে ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদের একটি আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওটি ভাইরাল হতেই ওইদিন সন্ধ্যায় ডিবি প্রধান হারুন তৌহিদ আফ্রিদিকে তার ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরানোর দায়িত্ব দেয়। পরে আফ্রিদি বাসা থেকে তুলে আনেন সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ জুবায়েরকে। জুবায়ের জানান, রাতভর ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে তাকে ভিডিওটি সরাতে বাধ্য করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আফ্রিদিকে শুধু জনপ্রিয় ইউটিউবার হিসেবে ভাবলে ভুল হবে। বরং তিনি ছিলেন অনলাইন মাফিয়া। দেশের নামকরা কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ওপর তার প্রভাব ছিল ব্যাপক। কথামতো না চললেই শুরু হতো নির্যাতন। আফ্রিদির ডিবি, সিআইডি, এটিইউ এবং সিটিটিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তাকে ভয় না পেয়ে উপায় ছিল না। জুলাই আন্দোলনের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সরকারের পক্ষে কাজে লাগানোর জন্য তিনি হুমকি দেন ।
জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্বপন আহমেদ আফ্রিদির নির্যাতনের অন্যতম শিকার। কারণ, তিনি ভারতের বিপক্ষে এবং আলেমদের পক্ষে কনটেন্ট তৈরি করতেন। আফ্রিদির নিষেধ অমান্য করায় তাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
ব্লগার সায়েমের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ছিল ভয়ঙ্কর। তাকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পাশের একটি ভবনে নিয়ে ৩০ থেকে ৩৫টি থাপ্পড় মারা হয়। এমনকি সরকারি বাহিনীর কর্মকর্তাদের সামনেই আফ্রিদি তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন।
এক নারী জানান, দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে আফ্রিদি তাকে ডিবি অফিসে ডেকে হুমকি দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পর্কের তথ্য প্রকাশ করলে মুনিয়ার মতো তাকেও ‘পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে’ বলে হুমকি দেন আফ্রিদি। ওই নারীর হাতে আসা ফোনালাপে মুনিয়ার বাসায় আফ্রিদির যাতায়াতের প্রমাণ মেলে। মুনিয়ার মৃত্যু রহস্যও নতুন করে আলোচনায় আসে।
হাসি-খুশি ইমেজের আড়ালে আফ্রিদি গড়ে তুলেছিলেন ভয়ঙ্কর এক অন্ধকার সাম্রাজ্য।
সোর্স: ডেইলি জনকন্ঠ
মন্তব্য করুন: