কারও দৃষ্টিতে তিনি স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক, কারও কাছে আবার উন্নয়নের নির্মাতা। শেখ হাসিনাকে ঘিরে এই দুই চিত্র বহু বছর ধরে বাংলাদেশে সমান্তরালভাবে চলে এসেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনের চাপে দেশত্যাগ করার আগ পর্যন্ত ক্ষমতার কেন্দ্রে তার ছিল অদম্য কর্তৃত্ব। তবে এই অবস্থান একদিনে তৈরি হয়নি, তার রাজনৈতিক পথচলার চার দশকজুড়ে ধীরে ধীরে নির্মিত হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেন ভেঙেপড়া আওয়ামী লীগের। দলকে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে তিনি দ্রুতই জনপ্রিয় হন কর্মী–সমর্থকদের কাছে। ৮০-এর দশকের শেষ দিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার অবস্থান তাকে জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত করে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজয় এলেও ভাগ্য ফিরে ১৯৯৬ সালে। সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এক মেয়াদ বিরতির পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক জয়ে আবার ক্ষমতায় ফেরেন। দুই-শর বেশি আসন পেয়ে দল যেমন শক্তিশালী হয়, তেমনি সংবিধান সংশোধন ও রাজনৈতিক বলয় নির্মাণের মাধ্যমে তিনি দীর্ঘমেয়াদী শাসনের পথ সুগম করেন।
২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ - এই তিন নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে তিনি ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। কখনো প্রতিদ্বন্দ্বীহীন নির্বাচন, কখনো রাতের ভোট, কখনো দলীয় প্রতিযোগিতার নাটক, সবই তার ক্ষমতাকে আরও কেন্দ্রীভূত করে তোলে।
২০২৪ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দ্রুতই রাষ্ট্রবিরোধী ক্ষোভের বিস্ফোরণে রূপ নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও দমন-পীড়নে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, প্রাণহানি ঘটে শতাধিক মানুষের। তবুও ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
কিন্তু জনস্রোতের চাপ সামলানো সম্ভব হয়নি। গণভবনের সামনে গণমানুষ পৌঁছানোর আগেই তিনি ভারত পালিয়ে যান।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরু হয় জুলাই গণহত্যাসহ নানা মামলার বিচার। শেখ হাসিনা একাধিক মামলার আসামি। ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগে তিনি বিচারের মুখোমুখি।
বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন দিল্লিতে। ভারত তাকে ফেরত পাঠাবে কি না, এ প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায়। রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনাল ইন্টারপোলের সহায়তা চাইলে তার ভবিষ্যৎ কী হবে, এখন সেটাই সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা।
মন্তব্য করুন: