[email protected] শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এইচএমপিভি কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী বৈশ্বিক মহামারি?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫ ১৮:০৫ পিএম

ফাইল ছবি

আমরা এখনও কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘ ছায়া থেকে পুরোপুরি বের হতে পারিনি। এরই মধ্যে বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন এক ভাইরাসকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে, যা এইচএমপিভি বা হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস নামে পরিচিত।

২০০১ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসটি বর্তমানে অনেক দেশে শিশুসহ বয়স্কদের মধ্যে গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠছে। 

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পাঁচ বছর পর এ বছরের জানুয়ারি মাসে চীনের উত্তর অঞ্চলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ায় নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, এইচএমপিভি কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী বৈশ্বিক মহামারি?

এইচএমপিভি কী?

এইচএমপিভি হলো এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস, যা মূলত শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের আক্রান্ত করে। এটি শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটিয়ে ফ্লু-জাতীয় উপসর্গ তৈরি করে, যেমন- জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন। ভাইরাসটি প্যারামাইক্সোভাইরিডি (Paramyxoviridae) পরিবারভুক্ত, যেখান থেকে রেস্পিরেটরি সিঙ্কসাইটাল ভাইরাস- আরএসভির মতো ভাইরাসও আসে।

সংক্রমণের হার ও সম্প্রসারণ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০২৩-২৪ মৌসুমে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এইচএমপিভি সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন- সিডিসির এর তথ্য অনুযায়ী, অনেক সময় এই ভাইরাস আরএসভি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে, ফলে সঠিকভাবে চিহ্নিত না হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ভ্যাকসিন বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা

বর্তমানে এইচএমপিভির জন্য কোনো অনুমোদিত ভ্যাকসিন বা নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। তবে বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন ও প্রতিরোধমূলক থেরাপি নিয়ে কাজ করছেন।

মহামারির সম্ভাবনা

এইচএমপিভি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। যেমন-

বর্তমানে এই ভাইরাস শনাক্ত করার মতো পর্যাপ্ত পরীক্ষা ব্যবস্থা নেই। এটি নিয়ে জনসচেতনতা তুলনামূলকভাবে কম। এটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সহজেই ছড়ায়। ভাইরাসটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে আরও সংক্রামক রূপ নিতে পারে।

এইসব ফ্যাক্টর মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, উপেক্ষিত এই ভাইরাস ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ, ভেজাল খাদ্য, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় বাংলাদেশে এইচএমপিভি ভাইরাসের প্রকোপ বেশি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

এক্ষেত্রে করণীয় কী?

১. স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে এই ভাইরাসের উপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

২. ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে জোর দিতে হবে।

৩. সাধারণ মানুষকে এই ভাইরাসের উপসর্গ ও ঝুঁকির বিষয়ে অবহিত করা জরুরি।

৪. শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসায় বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে, বিশেষ করে শীতকালীন মৌসুমে।

এইচএমপিভি আপাতদৃষ্টিতে কোভিড-১৯-এর মতো মহামারি না হলেও, এটি একটি “সাইলেন্ট থ্রেট” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নিলে এটি ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।

সোর্স: Rtv news

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর