[email protected] রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
১২ শ্রাবণ ১৪৩২

মহাকাশে বিরল ব্ল্যাকহোলের সন্ধান!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৫ ১৮:০৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

মহাকাশ গবেষণায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবং চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির মাধ্যমে তাঁরা একটি বিরল ধরনের ব্ল্যাক হোলের সন্ধান পেয়েছেন, যা হতে পারে বহুদিন খোঁজে থাকা ‘মধ্যম ভরবিশিষ্ট ব্ল্যাকহোল’।

এই ব্ল্যাকহোলকে একটি নক্ষত্র গিলে ফেলার সময় ধরা গেছে, যা মহাকাশ গবেষণায় এক যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নতুনভাবে শনাক্ত হওয়া এই বস্তুর নাম NGC 6099 HLX-1. এটি একটি দৈত্যাকার উপবৃত্তকার গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। এটি পৃথিবী থেকে ৪৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, হারকিউলিস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত।

এই ব্ল্যাকহোলের বিশেষত্ব কী

জ্যোতির্বিদ্যায় এখন পর্যন্ত মূলত দুই ধরনের ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে—

নক্ষত্রভিত্তিক ব্ল্যাকহোল: এগুলো মৃত নক্ষত্রের পতনের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং সূর্যের চেয়ে সাধারণত ১০০ গুণ পর্যন্ত ভারী।

অতিদৈত্যাকার ব্ল্যাকহোল: এগুলোর ভর লাখ বা কোটি গুণ সূর্যের চেয়েও বেশি এবং সাধারণত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থান করে।

তবে এ দুই শ্রেণির মাঝামাঝি যে ব্ল্যাকহোল—মধ্যম ভরবিশিষ্ট ব্ল্যাকহোল (আইএমবিএইচ)—তাদের খুঁজে পাওয়াই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তারা একদিকে নক্ষত্রের পতনের মাধ্যমে তৈরি হওয়ার মতো হালকা নয়, অন্যদিকে অতিদৈত্যাকার ব্ল্যাকহোলের মতো উজ্জ্বল আলো ছড়ায় না। ফলে টেলিস্কোপের নজর এড়িয়ে যায়।

এই আবিষ্কার তাই মহাকাশ গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। গবেষণার প্রধান লেখক, ইয়ি-চি চ্যাং, তাইওয়ানের ন্যাশনাল টসিং হুয়া ইউনিভার্সিটি থেকে বলেন, ‘গ্যালাক্সির কেন্দ্রে নয়, অন্য কোথাও এত উচ্চ এক্স-রে বিকিরণের উৎস খুবই বিরল। এরা সেই অদৃশ্য আইএমবিএইচ শনাক্তের চাবিকাঠি হতে পারে।’

নক্ষত্র গিলে খাওয়ার মুহূর্তে ধরা

২০০৯ সালে চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপ প্রথমবার এই উজ্জ্বল এক্স-রে বিকিরণের উৎস শনাক্ত করে। এরপর ২০১২ সালে এটি হঠাৎ করেই ১০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে এর উজ্জ্বলতা কমতে থাকে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে তা অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে যায়।

এই আচরণ গবেষকদের মতে এক টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্টের ইঙ্গিত দেয়—অর্থাৎ কোনো ব্ল্যাকহোল যখন একটি নক্ষত্রকে ছিঁড়ে টুকরো করে গিলে খাচ্ছে। ছিন্নবিচ্ছিন্ন নক্ষত্রের গ্যাস তখন ব্ল্যাকহোলের চারপাশে একটি জ্বলন্ত ডিস্ক তৈরি করে এবং এখান থেকেই শক্তিশালী এক্স-রে নির্গত হয়।

চন্দ্র থেকে প্রাপ্ত এক্স-রে ডেটা অনুযায়ী, NGC 6099 HLX-1–এর তাপমাত্রা ৩০ লাখ ডিগ্রি, যা এই ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অন্যদিকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এই ব্ল্যাক হোলের চারপাশে একটি ছোট তারার গুচ্ছ শনাক্ত করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এত ঘনভাবে জড়ো হওয়া এই তারার দলই HLX-1 ব্ল্যাকহোলের জন্য একধরনের খাদ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করছে।

গবেষণার সহলেখক রোবের্তো সোরিয়া, ইতালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস থেকে বলেন, ‘২০০৯ সালে HLX-1 উজ্জ্বল ছিল, ২০১২ সালে অনেক বেশি। তারপর এর উজ্জ্বলতা আবার কমে আসে। এখন দেখতে হবে এটি আবার জ্বলে ওঠে কি না। না হলে হয়তো এটি নিভেই যাবে।’

এ ধরনের আবিষ্কার মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোল ও গ্যালাক্সির বিবর্তন বুঝতে বিশেষভাবে সহায়ক। বিজ্ঞানীদের মতে, ছোট ছোট আইএমবিএইচ একত্রিত হয়ে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল তৈরি করতে পারে। আরেকটি তত্ত্ব বলছে, প্রাথমিক মহাবিশ্বে বিশাল গ্যাসীয় মেঘ ধসে পড়ে এক লাফে এ ধরনের ব্ল্যাকহোল তৈরি করেছিল।

এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে, বড় গ্যালাক্সির বাইরের প্রান্তে যেখানে সাধারণত সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকে না, সেখানে এ ধরনের ব্ল্যাকহোল ঘুরপাক খাচ্ছে। যেগুলো হঠাৎ কোনো নক্ষত্র গিলে ফেললেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

সোর্স: আজকের পত্রিকা

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর