একসময় সিনেমা বানাতে দরকার হতো বড় ক্যামেরা, লাইট, সেট আর ব্যয়বহুল সরঞ্জাম। এখন শুধু কয়েকটি শব্দ লিখলেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে সিনেমার মতো ভিডিও। সঙ্গে থাকছে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, চরিত্রের সংলাপ আর পরিবেশের প্রাকৃতিক শব্দও। প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর পরিবর্তনের নাম ভিও৩ (Veo 3) গুগলের তৈরি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুল।
সপ্তাহান্তে এটি সবার জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বিশ্বের যেকোনো ব্যবহারকারী চাইলে নিজের কল্পনা লিখে তাত্ক্ষণিক ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
ভিও৩ আসলে একটি টেক্সট-টু-ভিডিও মডেল। ব্যবহারকারী শুধু লিখবেন তিনি কেমন ভিডিও চান। যেমন- “শহরের ব্যস্ত রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছেন একজন তরুণ, পেছনে বাজছে মৃদু সংগীত।” কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই দৃশ্য ফুটে উঠবে ভিডিও আকারে। শুধু দৃশ্যই নয়, চাইলে তাতে যোগ হবে সংগীত, সংলাপ কিংবা পরিবেশের শব্দ। সবকিছু মিলিয়ে ভিডিওটি হয়ে উঠবে অনেকটা সিনেমাটিক মানের।
এটি ব্যবহার করতে হলে মোবাইলের জেমিনি অ্যাপ খুলতে হবে। প্রম্পট বারের তিন বিন্দুর মেনু থেকে বেছে নিতে হবে “Video: Generate with Veo” অপশন। এরপর লেখা যাবে কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যের বর্ণনা। ভিও৩ প্রযুক্তি সেটি প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করে দেবে ভিডিও।
গুগলের ফ্রি অফারে অবশ্য কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ তিনটি ভিডিও বানাতে পারবেন, প্রতিটির দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ আট সেকেন্ড। সব ভিডিওতেই থাকবে ওয়াটারমার্ক, যাতে বোঝা যায় এগুলো এআই নির্মিত। তবুও ব্যবহারকারীরা বলছেন, এত অল্প সময়ে এমন মানের ভিডিও তৈরি করার অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিও৩ এর প্রধান শক্তি হলো এর ভিজ্যুয়াল ও অডিওর নিখুঁত সমন্বয়। শুধু ছবি নয়, সংলাপ, সংগীত, পরিবেশের শব্দও ভিডিওতে যুক্ত করা যায়। এর ফলে তৈরি হয় আরও বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা। আগে যেসব টুল কেবল গবেষক বা পেইড ব্যবহারকারীদের হাতে সীমিত ছিল, এবার তা সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসায় আলোচনার ঝড় উঠেছে।
গুগল অবশ্য বলছে, এই উদ্যোগ মূলত একটি পরীক্ষা। ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া জেনে তারা ভবিষ্যতে এ টুলের ব্যবহার আরও বিস্তৃত করবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজ্ঞাপন, বিনোদন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট নির্মাণে ভিও–৩ আগামী দিনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ভিও৩ কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের কনটেন্ট নির্মাণে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। আগে যেখানে একটি বিজ্ঞাপন ভিডিও বানাতে সপ্তাহ লেগে যেত, এখন কয়েক মিনিটেই বানানো সম্ভব হবে। চলচ্চিত্র নির্মাতা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবহারকারীসবাই এর সুবিধা নিতে পারবেন।
সপ্তাহান্তে বিনামূল্যে ব্যবহারের এই উদ্যোগ গুগলের একপ্রকার প্রচারণা হলেও এতে সন্দেহ নেই যে সাধারণ ব্যবহারকারীরা প্রযুক্তির এক নতুন স্বাদ পাচ্ছেন। কয়েকটি শব্দ লিখে সিনেমা বানানোর যে স্বপ্ন একসময় অবাস্তব মনে হতো, সেটিই এখন হাতের নাগালে।
সোর্স: TECHWORLD
মন্তব্য করুন: