মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আট বছরপূর্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের ১১টি দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আজ থেকে ৮ বছর আগে এই ঢল শুরু হয়, যা এখনো চলছে থেমে থেমে। তাই রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দেশগুলো।
যৌথ বিবৃতির বিষয়বস্তু নিচে তুলে ধরা হলো—
আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে (রাখাইনে) রোহিঙ্গাদের ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ঘটে। আজ ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত এবং এখনো নতুন নতুন মানুষ শরণার্থী হয়ে ক্যাম্পগুলোতে আসছে। চলমান দুঃসহ বাস্তুচ্যুতি ও দুর্দশার মধ্যেও রোহিঙ্গাদের দৃঢ় মনোবলকে আমরা স্বীকৃতি জানাই।
রাখাইন রাজ্যে বর্তমান নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় এ বাস্তবতা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করায় আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা শুধু আশ্রয়ই দেননি, নতুন আগতদেরও বাঁচিয়ে রাখার মতো মানবিক সহায়তা প্রদান করছেন।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজ ঘরে ফিরে যেতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু সীমান্তপারে বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত, রাখাইনে বহু রোহিঙ্গা এখনো বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়েছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনো স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে এবং টেকসইভাবে ফিরে যাওয়ার মতো নয়।
বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ দূর করার মাধ্যমেই কেবল এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব। এর জন্য দরকার একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার। তাই আমরা স্বীকার করি, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাই, একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য।
আমরা মিয়ানমারের সেনা সরকার ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানাই। আমরা অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানাই এবং মানবিক সহায়তার জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিই।
আমরা আবারও আহ্বান জানাই, মিয়ানমার সেনা সরকার যেন অন্যায়ভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব।
আমরা বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব, যাতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট মানবিক সংকটের ওপর নজর রাখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে—২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আসন্ন উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আরও টেকসই সমাধানের পক্ষে, বিশেষত মানবিক তহবিল কমে যাওয়ায় আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ানো এবং ভবিষ্যতে মিয়ানমারে ফেরার জন্য প্রস্তুত করার পক্ষে। পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর প্রতিও আমরা সহায়তা অব্যাহত রাখব, যারা এত উদারভাবে শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
আমরা জোর দিয়ে বলছি, রোহিঙ্গাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। এতে তারা ক্ষমতায়িত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে। আট বছর পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সংকটের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা এবং এর মূল কারণ নিরসনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সোর্স: আমার দেশ
মন্তব্য করুন: