[email protected] সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২

ট্রাম্পের গাজা শান্তি সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছেন মোদি, দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:১০ পিএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: ফাইল ছবি

গাজা সংকট নিয়ে মিসরের অবকাশযাপন কেন্দ্র শারম আল শেখে আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘শান্তি শীর্ষ সম্মেলন’। এতে সভাপতিত্ব করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। সেই সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গাজা উপত্যকায় দুই বছরের যুদ্ধ সমাপ্তি এবং শান্তিচুক্তিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।

সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখনো মোদির এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেনি।

মিসরের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘শারম আল শেখ শান্তি শীর্ষ সম্মেলন’ সোমবার বিকেলে প্রেসিডেন্ট সিসি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ২০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ সম্মেলনটি ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ‘ভিশন’ অনুযায়ী আয়োজিত হচ্ছে।


বিবৃতিতে শীর্ষ সম্মেলনের তিনটি প্রধান লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে: গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ শেষ করা; মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে জোরদার করা; আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করা।

এ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সবে কার্যকর হয়েছে। সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠন এবং ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

যদি প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এটি ভারতের জন্য একাধিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুযোগ নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন ভারতীয় বিশ্লেষকেরা। তাঁরা মনে করছেন, মোদি সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেতে পারেন। এতে বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।

নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থানে পরিবর্তন ঘটে। মোদি এবং তাঁর সমর্থকেরা সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে মোদি সব সময় ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। গাজা গণহত্যা নিয়েও মোদি নীরব। এ নিয়ে দেশের ভেতরেই বিরোধী রাজনীতিকদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে মিসরের সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি গাজায় শান্তিপ্রক্রিয়াকে সমর্থন এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের জোরালো কূটনৈতিক উপস্থিতি জানান দেওয়া এবং মিসরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মজবুত করার একটি সুযোগ তৈরি হতে পারে মোদির এই উপস্থিতিতে।

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনে মোদিকে আমন্ত্রণের এই খবর এমন এক সময়ে এল যখন ভারত-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বেশ টানাপোড়েন চলছে। রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন এইচ-১বি ভিসা ফি এক লাফে ১ লাখ ডলার করায় সবচেয়ে চাপে পড়েছে ভারত। কারণ, ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি এই ভিসার সুবিধা পেয়ে থাকেন।

এই সম্পর্কের শীতলতা কাটাতে এবং বাণিজ্য আলোচনাকে এগিয়ে নিতে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনোনীত সার্জিও গর গতকাল শনিবার নয়াদিল্লি সফরে আসেন। ৯ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন তাঁর কূটনৈতিক নথিপত্র এখনো ভারতের পক্ষ থেকে অনুমোদিত হয়নি। প্রটোকলের দিক থেকে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক। এই সফরকে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সম্পর্ক মেরামতের ‘প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সার্জিও গর তাঁর সফরকে ‘অবিশ্বাস্য’ এবং ‘উষ্ণ’ বলে বর্ণনা করেন। এ ছাড়া তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গেও বৈঠক করেন।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর