[email protected] মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
৬ শ্রাবণ ১৪৩২

মস্তিষ্কপ্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে চীন!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৫ ১৭:০৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

চীনের বেইজিংয়ের এক সরকারি হাসপাতালের কম্পিউটারে হঠাৎ চীনা ভাষায় ভেসে ওঠে — ‘আমি খেতে চাই।’ এটি কোনো কীবোর্ড বা ভয়েজ মেসেজ দিয়ে লেখা হয়নি। লেখাটি এসেছে এক নারীর চিন্তা থেকে।

৬৭ বছর বয়সী ওই নারী অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস) রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কথা বলতে পারেন না। বোঝাতেও পারতেন না তিনি কী চান। মস্তিষ্কে চিপ বসানোর পর এখন তিনি মনের কথা সহজ বাক্যে প্রকাশ করতে পারছেন।

এটি চীনের চিকিৎসা গবেষণার একটি অংশ, যাকে বেতার ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই বলা হয়। এই পরীক্ষার আওতায় পাঁচজন রোগীর মস্তিষ্কে ‘বেইনাও-১’ নামের একটি ছোট চিপ বসানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রযুক্তি প্রথম চালু করলেও চীন খুব দ্রুতই এগিয়ে আসছে।

এই প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী লুও মিনমিন বলেন, রোগীরা এতে খুব সন্তুষ্ট। তারা মনে করছেন যেন শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, চিপটি মস্তিষ্কের সংকেত খুব সঠিকভাবে বুঝে তা লেখায় বা যন্ত্র চালনায় রূপান্তর করতে পারে। লুও জানান, আগামী এক বছরে আরো ৫০ থেকে ১০০ রোগীর ওপর এই পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রযুক্তিটি নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলে তা সারা বিশ্বে ব্যবহার করা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিংকও এখন পর্যন্ত পাঁচজন রোগীর শরীরে চিপ বসিয়েছে। আরেক মার্কিন কোম্পানি সিঙ্ক্রোন দশজন রোগীর ওপর এ পরীক্ষা চালিয়েছে। যাদের মধ্যে ছয়জন যুক্তরাষ্ট্রের আর চারজন অস্ট্রেলিয়ার।

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্স অধ্যাপক ম্যাক্সিমিলিয়ান রিজেনহুবার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পরে শুরু করলেও চীন নিঃসন্দেহে এখন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে নেতৃত্বও দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর যে উভয় দেশই এখন এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা উপলব্ধি করে গবেষণায় তৎপর।’

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রিসিডেন্স রিসার্চ-এর মতে, ২০২৪ সালে ব্রেইন প্রযুক্তির বাজার ছিল প্রায় ২৬০ কোটি ডলার, যা ২০৩৪ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১২৪০ কোটি ডলারে। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের জন্যই এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

বেইনাও-১ নামের চিপটি তৈরি করেছে বেইজিংয়ের চীনা ব্রেইন রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিআইবিআর)। ২০১৮ সালে এটি গড়ে তোলে বেইজিং নগর সরকার ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৩ সালে তারা নিউসাইবার নিউরোটেক নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি তৈরি করে, যার মাধ্যমে বেইনাও-১ তৈরি হয়।

বেতার ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তিতে কোথায় চিপ বসানো হচ্ছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো চিপ বসায় মস্তিষ্কের একটি স্তরের নিচে— এতে সংকেত স্পষ্ট হয়, কিন্তু অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ। আর চীনের চিপটি মস্তিষ্কের বাইরের স্তর থেকেই সংকেত নিতে সক্ষম, এতে ঝুঁকি কম।

এই চিপের মাধ্যমে মানব শরীরে মোট পাঁচবার পরীক্ষা চালানো হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি বিশ্বের প্রথম আধা-আক্রমণাত্মক বেতার ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস ।

সোর্স: বণিক বার্তা

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর