 
                                                                        
                                    মানবসভ্যতার ইতিহাসে যখনই জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রসারের কথা আসে, তখনই এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে উঠে আসে মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম। ইসলাম শুধু ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং জ্ঞান অন্বেষণকে করেছে একটি পূণ্য কর্ম। আর সেই অনুপ্রেরণাতেই গড়ে উঠেছে মুসলিম সভ্যতার এক অনন্য স্বর্ণযুগ যা আজও আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।
পবিত্র কোরআনে চিন্তা, অনুধাবন ও অন্বেষণের প্রতি যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তা মুসলিম মনীষীদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছে। বিখ্যাত ফরাসি চিকিৎসাবিদ ড. মরিস বুকাইলি তার বইতে বলেন, “কোরআনে এমন কিছু নেই, যা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক।” বরং কোরআনের আলোয় মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিশ্বসভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
রসায়নে
মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ানকে বলা হয় ‘রসায়নের জনক’। তিনি গন্ধক ও পারদ মিশিয়ে সোনা তৈরির চেষ্টা করেন এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া, পাতন, স্ফটিকীকরণ প্রক্রিয়া প্রথম ব্যবহার করেন।
পদার্থবিজ্ঞানে
ইবনে হাইসাম আলোকবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন। তার ‘কিতাব আল-মানাজির’ গ্রন্থে আলো ও দৃষ্টির ব্যাখ্যায় আধুনিক ক্যামেরার পূর্বসূরি ক্যামেরা অবস্কিউরা-র ধারণা পাওয়া যায়। ইবনে সিনার গবেষণাও পদার্থ ও শক্তির মৌলিক ধারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে
মুসলিমরা যুগান্তকারী অবদান রাখেন। ইবনে সিনার ‘আল-কানুন ফি আত-তিব্ব’ গ্রন্থটি শতাব্দী ধরে ইউরোপের মেডিকেল পাঠ্যসূচিতে ছিল। আজ-জাহরাবি অস্ত্রোপচারের যন্ত্র উদ্ভাবন করেন, আর ইবনে নাফিস আবিষ্কার করেন রক্ত সঞ্চালনের পথ।
সমর প্রযুক্তিতে
মুসলিমরা প্রথম কামান ও সংঘবদ্ধ সেনা কাঠামোর প্রচলন করেন। নৌবাহিনী গঠনেও তারা অগ্রণী ছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে
আল-খারেজমি ও আল-ফারাবি নক্ষত্র ও গ্রহের গতিবিধি পরিমাপের যন্ত্র ও তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।
গণিতে
অ্যালজেবরা, ত্রিকোণমিতি ও ‘শূন্য’ ধারণা মুসলিম বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই বিশ্বে বিস্তার লাভ করে।
ইসলামী সভ্যতার ‘হাউস অব উইজডম’ আন্দোলন গ্রীক, ভারতীয় ও পারস্য জ্ঞান অনুবাদের মাধ্যমে ইউরোপীয় রেনেসাঁর ভিত্তি তৈরি করে। এই সকল বৈজ্ঞানিক উত্তরাধিকার আজও বিশ্বকে পথ দেখায়।
মন্তব্য করুন: