 
                                                                        
                                    চলতি বছর হজ করতে স্পেন থেকে ঘোড়ায় চড়ে সৌদি আরব গেছেন তিন বন্ধু। এর মাধ্যমে স্পেন থেকে হজযাত্রার পুরোনো এক পথের পুনর্জন্ম দিয়েছেন তারা।
প্রায় ৫০০ বছর আগে যে পথ দিয়ে স্পেনের ঐতিহাসিক আন্দালুসিয়ার মুসলমানরা হজে যেতেন সেই পথ দিয়েই তারা হজে গেলেন। সেই সময়কে হৃদয়ে ধারণ করে দীর্ঘ পথ তারা পাড়ি দিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে সৌদি আরবের উত্তর সীমান্ত প্রদেশ দিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন তিন বন্ধু। এর আগে স্পেন থেকে ফ্রান্স, ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো, কসোভো, উত্তর মেসেডোনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রিস, তুরস্ক, সিরিয়া ও জর্ডান হয়ে আট হাজার কিলোমিটার দূরত্বের পথ পাড়ি দেন তারা।
৩৫ বছর আগে ইসলাম গ্রহণের পর স্পেনীয় তিন বন্ধু আবদুল কাদের হারকাসি, আবদুল্লাহ হার্নান্দেজ ও তারিক রদ্রিগেজ এ হজযাত্রার মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেন।
যাত্রাপথে তাদের সফরসঙ্গী হন স্পেনে বসবাসকারী বুশাইব জাদিল নামে একজন নির্মাণ ব্যবসায়ী। তিনি গাড়িতে করে দলটির জন্য লজিস্টিক্যাল সহায়তা দিয়েছেন।
দলটি দুই বছর ধরে অনুশীলন করে। এরপর ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্পেনের দক্ষিণে আল-মনাসতের মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে।
এ হজযাত্রায় যাওয়ার স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল ৩৫ বছর আগে আবদুল্লাহ হার্নান্দেজ যখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দান করেছেন- এজন্য আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমার আন্দালুসিয়ান পূর্বপুরুষদের পথে হজ পালন করব।’
তিন মাসের এই দীর্ঘ সফরে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারা। ঘোড়ার পিঠে তাদের বিচরণ স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক শহর দেখা, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়, ওসমানীয় আমলের স্থাপত্য নিদর্শন পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে তারা সবার মন জয় করে নেন। স্থানীয়দের আতিথেয়তার জন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আবদুল্লাহ হার্নান্দেজ বলেন, আমরা অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত, আমাদের হৃদয় ভালোবাসা ও আশায় পূর্ণ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। এই যাত্রার মাধ্যমে আমরা স্পেন থেকে মক্কার হারামে যাওয়ার ঐতিহাসিক আন্দালুসিয়ান পথ পুনরুদ্ধার করতে চাই। এটি শুধু শারীরিক যাত্রা নয়, বরং আত্মারও যাত্রা।
হজযাত্রীদের মধ্যে একজন, হারকাসি জানান, তারা হারানো ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করতে পেরে খুশি। তাদের ঘোড়ায় চেপে হজযাত্রা মুসলমান ও অমুসলিমদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। হার্নান্দেজ বলেন, ‘আমরা যেখানেই গিয়েছি, আমাদের স্বাগত জানানো হয়েছে। এক দেশের চেয়ে অন্য দেশ বেশি আন্তরিকতা দেখিয়েছে। মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের বাড়িতেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, আমাদের সঙ্গে খাবার খেয়েছেন, গল্প করেছেন এবং ইসলামের ওপর অর্থবহ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।’ সীমিত তহবিল নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করেছিলেন। তবে পথে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা তাদের সহযোগিতা করে যাত্রার খরচ নির্বাহ করতে সহায়তা করেছেন।
সোর্স: আমার দেশ
মন্তব্য করুন: