প্রকাশিত:
                                        ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ১১:১০ এএম
                                        
                                                                            
 
                                                                        
                                    আলোচিত শেখ হাসিনার সেই পিয়ন ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মানিলন্ডারিং আইনে এই অনুসন্ধান চালানো হবে।
আলোচিত শেখ হাসিনার সেই পিয়ন ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মানিলন্ডারিং আইনে এই অনুসন্ধান চালানো হবে।
এ তথ্য মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকালে সিআইডি থেকে পাঠানো এক বার্তায় তুলে ধরা হয়। আলোচিত জাহাঙ্গীর এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক এবং হুণ্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছে বলেও জানতে পেরেছে পুলিশের এই ইউনিট। যার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বার্তায়।
ওই বার্তায় বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনের ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমের কাজ ছিল সুধা সদনে খাবার পানি সরবরাহ করা। এ কারণে তার নাম ছিল ‘পানি জাহাঙ্গীর’। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করেন তিনি। এই পরিচয়ে আওয়ামী লীগের পদ, চাকরি নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করেন জাহাঙ্গীর। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গড়েছেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ৪০০ কোটি টাকার মালিকসহ গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন ।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পারার কথা তুলে ধরে সিআইডি বলছে, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। যার মধ্যে ধানমন্ডিতে ২৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যবসায় মূলধন ৭৩ লাখ টাকা , ১টি গাড়ি এবং ব্যাংকে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়। জাহাঙ্গীরের নিজের নামে এলাকায় ৪ কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষি জমি, মিরপুরে ৭ তলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান, গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে পৈতৃক ভিটায় চারতলা বাড়ি রয়েছে। এর বাইরে তার পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি রয়েছে, নোয়াখালী শহর মাইজদীর হরিনারায়নপুর এলাকায় যার ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়ায় দেয়া আছে।
এছাড়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, ডিপিএস ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা, ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অংশীদারি ফার্মে মূলধন ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা থাকার তথ্য পাওয়ার কথা বলেছে পুলিশের বিশেষ এ ইউনিট।
এর আগে গত গত ১৪ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবশেষ সংবাদ সম্মেলনে এই জাহাঙ্গীরকে নিজের পিয়ন ইঙ্গিত করে ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তার ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য জানার পর তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার কথাও সেদিন সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সয়ং সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা, জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হলে পরদিনই জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্টাফ পরিচয় দেওয়া জাহাঙ্গীর গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১ আসন (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাহাঙ্গীর আলম সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছেন তুলে ধরে তখন বলা হয় প্রধানমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের কোনো সম্পর্ক নেই। নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের প্রয়াত রহমত উল্লাহর ছেলে জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতেও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সকলকে সে সময় অনুরোধ করা হয়।
মন্তব্য করুন: