 
                                                                        
                                    গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত গণ–অভ্যুত্থান ও তাতে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ইনডিপেনডেন্টকে ই–মেইলে দেওয়া তিনটি পৃথক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অবস্থান স্পষ্ট করেন। এটি ক্ষমতাচ্যুতির পর তাঁর প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্য।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আমাদের জাতির হারানো প্রতিটি সন্তান ও নাগরিকের জন্য শোক প্রকাশ করি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কোনো দায় স্বীকার করছি না।” তিনি ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে ‘সহিংস বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করে বলেন, “রাষ্ট্ররক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ।”
দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানায়, ১৫ বছরের শাসন শেষে শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে নির্বাসনে আছেন। গণ–অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয় বলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন জানিয়েছে— যা ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংস ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। তবে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, এই সংখ্যা “অতিরঞ্জিত” এবং প্রকৃত তথ্য বিকৃত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ছাত্র আন্দোলন দমনে তিনি সরাসরি প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বলেন, “এই ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল, যা আমার বিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত। এটি একটি প্রহসনের আদালত।”
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, চেইন অব কমান্ডে “কিছু ভুল” হয়েছিল, তবে সরকারের উদ্দেশ্য ছিল “প্রাণহানি যতটা সম্ভব কমানো।” তাঁর ভাষায়, “আমি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছি, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দিলে তা হবে “আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।” তিনি সতর্ক করেন, “আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা মানে লাখো ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা।”
দেশত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “গত বছরের আগস্টে দেশে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে; আমার জীবন ও আশপাশের মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ছিল।” নির্বাসনে থেকেও তিনি বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা আমার অঙ্গীকার।”
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর নিপীড়ন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়মিত ঘটেছে। রয়টার্স উল্লেখ করেছে, ক্ষমতাচ্যুতির পর তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে অভিযানে হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হলেও, নিজের আমলে নিখোঁজ শত শত নাগরিকের বিষয়ে শেখ হাসিনা কোনো মন্তব্য করেননি।
মন্তব্য করুন: