বিশ্বের ধর্মীয় চিত্রে ইসলাম একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ২০২৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২০৫ কোটিরও বেশি।
নিচে এমনই ছয়টি দেশের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো বর্তমান বিশ্বে ইসলাম ধর্ম পালনে শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিত। যেখানে প্রায় ২৪ কোটি মুসলমান বাস করে। দেশটির প্রতিটি শহর ও গ্রামে বর্তমানে ৮ লক্ষ মসজিদ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ান মুসলমানরা ধর্মচর্চায় অত্যন্ত সক্রিয়। তারা নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করে। আজান শোনা মাত্রই রাস্তায় চলা মানুষও নামাজের জন্য মসজিদে ছুটে যায়।
রমজান মাসে পুরো দেশ যেন এক বিশুদ্ধ আত্মশুদ্ধির পরিবেশে আবৃত থাকে। শুধু নামাজ নয়, এখানে ধর্মীয় শিক্ষা, কুরআন তিলাওয়াত এবং ইসলামি আদর্শ মেনে চলাও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। সরকারিভাবেও ধর্মচর্চাকে উৎসাহিত করা হয়, এবং ধর্মীয় দিবসগুলো রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হয়।
পাকিস্তান
পাকিস্তান একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র দেশ, যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশটির বর্তমান মুসলমান সংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় শতভাগ।
পাকিস্তানে প্রায় ৫ লক্ষ মসজিদ রয়েছে, যার অধিকাংশেই প্রতিদিন জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। রমজানে দেশের সর্বত্র ধর্মীয় আমেজ তৈরি হয়, এবং তারাবীহ নামাজে মসজিদগুলো ভরে ওঠে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং প্রচুর সংখ্যক মাদরাসা রয়েছে যেগুলো হিফজ ও আলেম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে প্রায় ১৭ কোটি মুসলমানের বসবাস। ধর্মীয় আবেগ আর ইসলামি চর্চার দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত।
এখানে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে। দেশের প্রায় প্রতিটি মহল্লা ও গ্রামে ছড়িয়ে আছে মসজিদ মাদরাসা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মসজিদ রাজধানী ঢাকায়। এজন্য এ শহরকে মসজিদের শহর বলা হয়। মুসলমানরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে মসজিদে যান। বিশেষ দিবসগুলোতে ধর্মীয় অনুশীলনের ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়।
রমজান, কুরবানী, মিলাদ, মাহফিল প্রভৃতি ধর্মীয় আচারব্যবহার এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলে। শিশুদের কুরআন শিক্ষা ও ইসলামি আচার-আচরণের গুরুত্ব প্রতিটি পরিবারে লক্ষ্য করা যায়। টেলিভিশন, সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদপত্রে ইসলাম সম্পর্কিত আলোচনা ও শিক্ষা পরিবেশন এখন নিয়মিত বিষয়। এখানকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দান-সদকা, যাকাত ও ইসলামি নৈতিকতা পালনে সচেতন।
সৌদি আরব
সৌদি আরব ইসলামের জন্মভূমি। দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদীনার দেশ। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৩.৭ কোটি মুসলমান ধর্ম পালন ও শরিয়াহ আইন অনুসরণে অত্যন্ত কঠোর ও ধর্মনিষ্ঠ। সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ১ লক্ষ থেকেও বেশি মসজিদ আছে। দেশের প্রতিটি এলাকায়, এমনকি রাস্তার পাশে পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
এই দেশে নামাজ, রোজা, হজ ও উমরাহ পালন একটি বাধ্যতামূলক সংস্কৃতি হিসেবে দেখা হয়। ইসলামি পোশাক যেমন আবায়া ও জুব্বা পরা বাধ্যতামূলক, ধর্মীয় নৈতিকতা কঠোরভাবে প্রতিপালিত হয়। কুরআন শিক্ষা, হাদিস অধ্যয়ন এবং শরিয়াহভিত্তিক আইন এখানে রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে সরকারের উৎসাহ ও বিনিয়োগ চোখে পড়ার মতো। সৌদির প্রতিটি নাগরিকের জীবনে ইসলাম কেবল ধর্ম নয়, বরং জীবনব্যবস্থার নাম।
তুরস্ক
তুরস্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও ইসলাম ধর্মচর্চায় দেশটির জনগণ অত্যন্ত আগ্রহী। প্রায় ৯ কোটি মুসলমানের এই দেশে মসজিদের সংখ্যা ৯০ হাজারের মতো। ঐতিহাসিক মসজিদ, বিশেষত ইস্তাম্বুলের সুলতান আহমেদ মসজিদ, আয়া সোফিয়া প্রভৃতি মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয়, বরং ইসলামি ঐতিহ্যের স্মারক।
এখানকার মানুষ রমজান মাসে ব্যাপক ধর্মীয় উৎসবের মাধ্যমে রোজা পালন করে, তারাবিহ ও ইফতারে মসজিদে জনসমাগম হয়। তুরস্কে ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক ও প্রাচীন ধারার সম্মিলন লক্ষ্য করা যায়। নারীরা হিজাব পরিধান করে এবং ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশে গর্ববোধ করে। ইসলামি উৎসবগুলো এখানে সামাজিক বন্ধনের প্রতীক।
মিশর
মিশর মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রাচীন ইতিহাসসমৃদ্ধ দেশ, যেখানে ইসলাম ধর্ম দীর্ঘকাল ধরে গভীরভাবে প্রোথিত। প্রায় ১১ কোটি মুসলমানের বসবাস এ দেশে, যা মিশরীয় জনসংখ্যার বিপুল অংশ।
এখানে প্রায় ১ লাখের বেশি মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে কায়রোর আল-আজহার মসজিদ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু উপাসনালয়ই নয় বরং বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ও বটে।
মিশরের মুসলমানরা ধর্মচর্চায় আগ্রহী, বিশেষত রমজান মাসে এখানকার ধর্মীয় পরিবেশ অন্য রকমের আধ্যাত্মিকতা সৃষ্টি করে। এখানে ধর্মীয় বক্তৃতা, হাদিস চর্চা এবং ইসলামি ফিকহ শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ যথেষ্ট। নারীরা হিজাব পরিধানে আগ্রহী এবং পুরুষেরা নিয়মিত নামাজ আদায় করে।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে ইসলামি শিক্ষা ও চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিচ্ছে মিশর।
ইসলাম ধর্ম চর্চায় এই ছয়টি দেশ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধর্মীয় বিধিবিধান পালন, সামাজিক নৈতিকতার চর্চা, মসজিদকেন্দ্রিক জীবন এবং ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার, সবদিক দিয়েই তারা মুসলিম বিশ্বে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।
সোর্স: সময়
মন্তব্য করুন: